বাস্তব জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের পরিচিতি থাকে। বিদ্যালয়ে বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এক ধরনের পরিচিতি, আবার ব্যক্তিগত বা বন্ধুবান্ধবের কাছে আরেক ধরনের পরিচিতি থাকে। আরেকটা জগতেও এখন আমাদের পরিচিতি থাকে, সেটি হলো ভার্চুয়াল জগৎ। ভার্চুয়াল জগৎ হলো যেখানে সরাসরি আমাকে কেউ দেখে না, কিন্তু আমার ডিজিটাল উপস্থিতি দেখে। এখানে আমাদের নিজেদের পরিচিতি না দিয়ে কোনো কাজ করা যায় না। যেকোনো ওয়েবসাইটে আমাদের আগে নিজের পরিচিতি দিয়ে বা তৈরি করে পরবর্তী ধাপে যেতে হয়। এ জন্য আমাদের জেনে নেওয়া উচিত যে কী করে নিজের ভার্চুয়াল পরিচিতি তৈরি করতে হয়, ভার্চুয়াল পরিচিতির জন্য কী কী তথ্য দেওয়া উচিত বা ভার্চুয়াল পরিচিতির নৈতিক দিকগুলোই বা কী। আমরা আগামী কয়েকটি সেশনে কিছু কাজের মাধ্যমে এই অভিজ্ঞতাই অর্জন করব।
সুপ্রিয় শিক্ষার্থী, শুভেচ্ছা! আমাদের ভার্চুয়াল পরিচিতি বিষয়ে সবারই মোটামুটি আগের কিছু অভিজ্ঞতা রয়েছে, ঠিক জানতাম না যে এটিই ভার্চুয়াল পরিচিতি। আমরা কত জায়গায় কত তথ্য দিয়ে দিই যা পরে আমরা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দেখতে পাই। প্রয়োজনীয় কোনো সেবা গ্রহণ করতে আমাদের প্রথমেই আমাদের একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হয়। সে জন্য সেই সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে গিয়ে আমাদের নিবন্ধন করতে হয়। পরের পৃষ্ঠায় দেয়া ছবিতে একজনের প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে একটি ভার্চুয়াল পরিচিতি দেখতে পাচ্ছি। এবার আমরা বের করি এই ভার্চুয়াল পরিচিতিতে কী কী তথ্য দেওয়া হয়েছে…
ভার্চুয়াল পরিচিতি
ভার্চুয়াল পরিচিতি হলো আমাদের সম্পর্কে দেওয়া কিছু তথ্য যা ডিজিটাল যোগাযোগমাধ্যম বা ডিজিটাল সামাজিকমাধ্যমে ব্যবহার করার জন্য একটি পরিচিতি। যেমন আমাদের রোল নম্বর। এটি কিন্তু আমার নাম বা ছবি নয়। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে ব্যবহার করলে এটি দিয়ে আমাকে চিনে ফেলা যেতে পারে। অনেক সময় আমরা ছদ্মনামেও আমাদের পরিচিতি তুলে ধরি, তখন সরাসরি আমাদের নিজের পরিচয় প্রকাশ করি না। এখন মনে করি, আমার প্রিয় প্রাণী সিংহ। আমি স্কুলের দেয়ালিকায় নিজের পরিচিতিতে সবসময় একটি সিংহের ছবি দিচ্ছি। আস্তে আস্তে সবাই আমাকে এই ছবি দিয়ে চেনা শুরু করবে। এটি হলো এক ধরনের ভার্চুয়াল পরিচিতি। যেহেতু ডিজিটাল মাধ্যমে সব কিছু খুব দ্রুত আর বড় পরিসরে হয়, তাই সেখানে এই চেনার কাজটি আস্তে হবে না; বরং খুব দ্রুত অনেক বেশি মানুষের মধ্যে এটি ছড়িয়ে যাবে। কাজেই সেখানে সব কিছু একটু ভেবেচিন্তে করা ভালো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভুল বা ছদ্ম পরিচয় দিলে চলবে না, এতে আমাদের সমস্যা হতে পারে। যেমন আমি সরকারি কোনো একটি সেবা প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক হিসেবে নিবন্ধন করলাম। সেখানে আমি ছদ্মনাম ও ছদ্ম ছবি ব্যবহার করলে তথ্য যাচাইয়ে আমাকে হয়তো তারা সেবাটা দেবে না। তাই অবস্থা প্রেক্ষিতে আমাদের পরিচিতি তুলে ধরতে হবে। আবার বিশ্বস্ত কোনো ওয়েবসাইট ছাড়া ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া যাবে না।
[জানা-অজানা]
আমরা এখন একটি কাজ করব। নিচে দুইজন পেশাজীবি ব্যক্তির ছবি দেওয়া আছে।
আমরা ৬ টি দলে ভাগ হয়ে যাব এবং প্রতিটি দল উপরের যেকোনো একজন পেশাজীবির সম্পর্কে লিখব যে তাঁদের কী কী আমাদের জানা থাকে আর কী কী জানা থাকে না। সেই পয়েন্টগুলো নিচের ছকে লিখব।
জানা | অজানা |
---|---|
১। নাম
| ১। পাসপোর্ট নম্বর |
২।
| ২।
|
৩।
| ৩।
|
৪।
| ৪।
|
৫।
| ৫।
|
উপরের কাজটি করে আমরা জানলাম যে বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রোফাইলের তথ্য ভার্চুয়াল জগতে পাওয়া গেলেও কিছু ব্যক্তিগত তথ্য রয়েছে যা আমরা জানতে পারি না। আমাদেরকেও এমন অনেক তথ্য ভার্চুয়াল পরিচিতির মধ্যে দেওয়া উচিত নয়।
এখনকার সময়ে নিজের একটা ভার্চুয়াল পরিচিতি সবারই থাকে। সামাজিক, পারিবারিক বা শিক্ষাকেন্দ্ৰিক সবারই একটা পরিচিতি বা প্রোফাইল থাকে। কারও দুটি আবার কারও তিনটি প্রোফাইল বা পরিচিতি থাকে। কখনও কখনও কোনো সেবা পাবার পূর্ব শর্তই হলো একটি প্রোফাইল তৈরি করা। তাই এই সেশনে আমরা অভিজ্ঞতা নেব কী করে— নৈতিক দিক বিবেচনা করে একটি প্রোফাইল তৈরি করা যায়।
একটি ব্যাংকের অনলাইন অ্যাপ এর মাধ্যমে আরাফের বিদ্যালয়ের প্রতি মাসের বেতন পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিলেন। সেজন্য তার বাবাকে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে একটি এ্যাকাউন্ট খুলতে হল। এখন সেই অ্যাপ এ প্রবেশ করলে তার বাবার কিছু তথ্য প্রোফাইলে দেখা যায়। কোন সরকারি ই-সেবা বা বেসরকারি ই-কমার্স সেবা নেবার সময় প্রতিষ্ঠানগুলোর জানা দরকার কে এই সেবাটি চাইছে। তখন সেইসব প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ভার্চুয়াল পরিচিতি তৈরি করতে হয়। অনেক জায়গায় এটিকে অ্যাকাউন্ট বলে। অনেকটা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের মত। ঠিক যতটুকু তথ্য না হলে চলবে না ততটুকু তথ্যই দেয়ার নিয়ম। অতিরিক্ত তথ্য কখনই দেয়া উচিৎ নয়। ভার্চুয়াল জগতের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো নিজের ব্যক্তিগত তথ্য। আমি যেমন আমার বাসায় মিনিটে মিনিটে কী ঘটছে সেটি মাইক দিয়ে বাইরের দরজায় দাঁড়িয়ে ঘোষণা করি না, তেমনি আমার ব্যক্তিগত জীবনে কখন কি ঘটছে সেগুলো আগ বাড়িয়ে ভার্চুয়াল জগতে জানানো উচিত নয়। মনে রাখতে হবে, যে তথ্য একবার আমি ডিজিটাল মাধ্যমে রাখব সেটি চিরকালের জন্য প্রকাশ্য থেকে যাবে।
প্রোফাইল আমরা দুই ভাবে তৈরি করতে পারি। কোনো সেবা নেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক চাওয়া তথ্য দিয়ে ঐ প্রতিষ্ঠানের জন্য আমাদের পরিচিতি তৈরি করা। আবার নিজেই নিজেকে ভার্চুয়াল জগতে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য প্রোফাইল তৈরি করা। এ জন্য আমার কী কী তথ্য আমি ভার্চুয়াল জগতে রাখতে পারি, সে ব্যাপারে আমাকে খেয়াল রাখতে হবে। আগের সেশনে আমরা দেখেছি কোনো কোনো তথ্য অন্যকে জানানো যায় আর কোনো কোনো তথ্য আমরা জানাব না। আমরা আরেকটু বড় হলে সামাজিক যোগাযোগ বা পেশাগত মাধ্যমে নিজেদের প্রোফাইল তৈরি করে সেটা সবার কাছে শেয়ার করতে পারি। সবার জন্য প্রকাশ করাকে বলা হয় পাবলিক শেয়ারিং। আর যদি একদম ব্যক্তিগত তথ্য নির্দিষ্ট কারও সঙ্গে বিনিময় করি, সেটাকে বলা হয় প্রাইভেট শেয়ারিং। এই অপশনগুলো চালু বা বন্ধ রাখতে পারি। তাই প্রয়োজন অনুসারে আমরা এই ব্যবস্থা নেব। অনেক সময় যদি তেমন কোনো নিয়ম না থাকে আমরা নিজেদের ছবি ভার্চুয়াল জগতে প্রকাশ না করে অ্যাভাটার ব্যবহার করতে পারি।
অ্যাভাটার হলো ভার্চুয়াল পরিচিতির জন্য নিজের ছবি ব্যবহার না করে প্রতীকী ছবি ব্যবহার করা। বাংলা শব্দ অবতার থেকে এই শব্দটি এসেছে। কোনো কোনো সামাজিকমাধ্যমে অনেক অ্যাভাটার দেওয়া থাকে, আমরা পছন্দমতো যেকোনো একটি নিজের পরিচিতির জন্য ব্যবহার করতে পারি। আবার নিজের অ্যাভাটার নিজেও তৈরি করে নিতে পারি।
নিচের ছবিটি দেখি। এই ওয়েবসাইটে গিয়ে আমরা অনেক ধরনের সরকারি সেবা নিতে পারি।
এখন আমরা উপরের ছবিতে কোথায় নিবন্ধন কথাটি আছে তা খুঁজে বের করি এবং সেটিতে গোল চিহ্ন দিই। এই নিবন্ধন কথাটির উপর চাপ দিলে নিচের ছবিটি আসবে।
এখানে নতুন অ্যাকাউন্ট বলতে নতুন ভার্চুয়াল পরিচিতি তৈরি করা বুঝাচ্ছে। মনে রাখবে সরকারকে ভুল তথ্য দেওয়া আইনত দণ্ডনীয়। অর্থাৎ এ ধরনের ওয়েবসাইটে নিজেদের সঠিক তথ্যই দিতে হয়।
এ রকম অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যেখান থেকে সেবা নেওয়ার আগেই আমাদের একটি অ্যাকাউন্ট বা ভার্চুয়াল পরিচিতি তৈরি করে নিতে হয়। এটি হলো সেবা গ্রহণের জন্য ভার্চুয়াল পরিচিত।
আমরা যদি নিজেরাই কোনো ওয়েবসাইটে নিজেদের পছন্দমতো পরিচিতি দিতে চাই তাহলে আমাদের পরিচিতি পেজটি কেমন হবে তার একটি ডিজাইন আগাম তৈরি করে রাখি। পরের পাতায় খালি ঘরে আমাদের তথ্য দিয়ে একটি ভার্চুয়াল পরিচিতির পেজ তৈরি করি। ছবির বদলে নিজেদের আঁকা এ্যাভাটার দিব।
আগের ক্লাসে আমরা জেনেছি কি করে ভার্চুয়াল পরিচিতি তৈরি করতে হয়। আমরা হাতে লিখেও একটা প্রোফাইল তৈরি করেছিলাম। হাতে লিখে তৈরি করা প্রোফাইল বা ভার্চুয়াল প্রোফাইলের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য না থাকলেও ভার্চুয়াল প্রোফাইল সবার কাছে উন্মুক্ত হয়ে যায়। তাই আমাদের প্রতিটি বিষয় বিবেচনা করে আমাদের ভার্চুয়াল পরিচিতি সকলের নিকট উপস্থাপন করা উচিত। নিচে মাইক্রোসফট এর প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এর ভার্চুয়াল পরিচিতির তিনটি চিত্র দেওয়া হলো। একটি টুইটার, একটি লিংকডিন আরেকটি ফেইসবুক থেকে নেওয়া হয়েছে। টুইটার, লিংকডিন এবং ফেইসবুক এই সবগুলোই হচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এর যে কোন একটি দেখে আমরা তুলনা করে নেব আমাদের হাতে লেখা পরিচিতির সঙ্গে এর মিল ও অমিল কী কী রয়েছে।
উপরের তথ্যগুলো বিবেচনা করে আমরাও তাহলে একটি প্রোফাইল বা ভার্চুয়াল পরিচিতি তৈরি করে নিই। আমাদের বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করা ‘কিশোর বাতায়ন'-এর স্ক্রিনশট ফর্মটিতে নিজেদের প্রোফাইল তৈরি করার কাজটি অনুশীলন করে নিই।
এবার আমরা নিচের প্রশ্নের উত্তরগুলো দলে আলোচনা করে খোঁজার চেষ্টা করি
১. বিল গেটসের প্রোফাইলটি কবে খোলা হয়েছে? উত্তর:
২. বিল গেটসের প্রোফাইলটি কতজন অনুসরণ করছে? উত্তর:
৩. কি করে বুঝবো যে এটি তাঁর প্রকৃত প্রোফাইল বা পরিচিতি? উত্তর:
৪. এটি ছাড়াও আর কোন কোন মাধ্যমে তার প্রোফাইল রয়েছে? উত্তর:
৫. মাইক্রোসফট ছাড়াও কোন কোন বিল গেটসের আর কী কী প্রতিষ্ঠান রয়েছে? উত্তর:
|
আজকে আমরা কিশোর বাতায়নে নিবন্ধন করব। আমাদের বইয়ে গতকাল যে তথ্যগুলো লিখেছিলাম সেগুলো ব্যবহার করে কিশোর বাতায়নের রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন সম্পন্ন করব।
ভার্চুয়াল পরিচিতি ব্যবহারের নৈতিক দিক
অনেক সময় আমরা দেখতে পাই যে আমাদের কোনো পরিচিত মানুষ ভুল করে অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য তার ভার্চুয়াল পরিচিতিতে দিয়ে দিয়েছে। এর অর্থ হলো আমরা ডিজিটাল মাধ্যমে হঠাৎ করে তার ব্যাপারে এমন কিছু জেনে ফেলেছি যেটি আমাদের জানার কথা নয়। তাহলে কি আমরা সেই তথ্যের অপব্যবহার করব? কখনোই না। আমরা তাকে নিরাপদভাবে জানিয়ে দিব যেন সে তথ্যটি মুছে ফেলে। আমরা কি কখনও আমার ভার্চুয়াল পরিচিতিতে নিজে যা নই সেটি দাবি করব? প্রথমতো, কখনও নিজের ব্যাপারে ভুল বা অতিরঞ্জিত তথ্য একবার ডিজিটাল মাধ্যমে চলে গেলে সেটি মুছে ফেলা প্রায় অসম্ভব। কাজেই আমরা এমন কোনো কাজ করব না যেটি ত্রিশ-চল্লিশ বছর পরও আতঙ্ক হয়ে আমাদের তাড়া করে বেড়াবে।
কিশোর বাতায়ন বা কানেক্টে রেজিস্ট্রেশন বা সাইন আপ করার পর আমার ভার্চুয়াল পরিচিতির বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার জন্য আমাকে তথ্য সম্পাদনা করতে হবে। কী কী তথ্য দিতে হয় তা পরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে। সে অনুযায়ী আমরা তথ্য প্রদান করব।
কিশোর বাতায়নের মতো করেই আরও অনেক সেবা নেওয়ার জন্য পরবর্তীতে আমাদের ভার্চুয়াল পরিচিতি তৈরি করতে হবে। ই-কমার্স বা নাগরিক সেবা নিতে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আমাদের নিজস্ব তথ্য দিয়ে ভার্চুয়াল পরিচিতি তৈরি করতে হয়। নিরাপদ ওয়েবসাইটে আমাদের সঠিক তথ্য ও ছবি দিতে হয়, আবার যেক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, সেখানে নিজের সব পরিচয় প্রকাশ করাও ঠিক নয়। এমন অনেক মাধ্যম রয়েছে, যেখানে সকল তথ্য দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ, এ জন্য আমাদের নিরাপদ ভার্চুয়াল পরিচিতি তৈরি করা জরুরি।